1. nurnobi.kuet16@gmail.com : Md Nur Nobi Khan : Md Nur Nobi Khan
  2. admin@manabatarkontho.com : admin24 :
  3. afruja@gmail.com : Afruja Talukder : Afruja Talukder
বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৫ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে এনজিওর ভূমিকা

  • প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৯ বার পড়া হয়েছে

মানবতার কণ্ঠ ডেস্ক

নন-গভর্নমেন্ট অর্গানাইজেশন (এনজিও) বা বাংলায় বেসরকারি সংস্থা সাধারণত সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধনকৃত অরাজনৈতিক অলাভজনক সামাজিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়। এছাড়া স্টক একচেঞ্জের নিবন্ধনকৃত ফাউন্ডেশনও এনজিওর অন্তর্ভুক্ত। বৈশিষ্ট্যগত দিক দিয়ে এগুলো মূলত সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসাবে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে অনেক থাকলেও স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করার জন্য এনজিওর বিকাশ ও কার্যক্রম সারা দেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যাওয়ার কারণে সরকারের সমান্তরাল আরও একটি জনসেবার স্রোত তৈরি হয়। স্বাধীনতার আগে এতিমখানা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান বেশি ছিল যেগুলোকে এনজিও হিসাবে বিবেচনা করা হতো এবং এখনো করা হয়। কিন্তু স্বাধীনতার পর উন্নয়ন ধারায় এনজিও কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে এ ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলো আলোচনার মধ্যে নেই। এনজিও বলতে এখন সারা দেশের মানুষের ধারণা হলো-বৈদেশিক সাহায্যে পরিপুষ্ট প্রতিষ্ঠান যেগুলো এ দেশের দুর্দশাগ্রস্ত ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে কোনো না কোনোভাবে সাহায্য-সহযোগিতাসহ দেশের উন্নয়নের জন্যও কাজ করে সেগুলোকেই বোঝানো হয়। এ ধারণা সঠিক, অমূলক নয়। গত শতাব্দীর আশি ও নব্বইয়ের দশকে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় এনজিওর দ্রুত বিকাশের কারণে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামে এনজিও কার্যক্রম পরিচালিত হতে শুরু করে অদ্যাবধি চলে আসছে। তবে এনজিওর এমন ব্যাপক বিকাশ ঘটত না যদি ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালিত না হতো। বলাবাহুল্য, মূলত ক্ষুদ্রঋণের কারণে এনজিও কার্যক্রমের ব্যাপকতা লাভ করেছে।
স্বাধীনতা-উত্তর (সত্তর দশকে) বৈদেশিক সাহায্যে এবং বিদেশি এনজিও বিশেষ করে অক্সফাম, কেয়ার, কনসার্ন, টেরি দাজ হোমস, সেভ দ্য চিলড্রেন, আরডিআরএস ইত্যাদি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপভিত্তিক বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশে মানবিক সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে এবং তাদের কার্যক্রমের মধ্যে ছিল ত্রাণ, চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও পুনর্গঠন। সত্তর দশক পেরিয়ে আশির দশক থেকে মূলত দেশীয় সংস্থার বিস্তার লাভ করতে থাকে। দেশীয় বড় সংস্থাগুলোর মধ্যে প্রথমেই আসে ব্র্যাকের নাম। একই সময়ে চার্চভিত্তিক কয়েকটি সংস্থা যেমন- ওয়ার্ল্ড ভিশন, সিসিডিবি, কারিতাস, হিড বাংলাদেশ ইত্যাদি সংস্থাও প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্য শিক্ষা ত্রাণ পুনর্বাসন ও পুনর্গঠনের জন্য কাজ শুরু করে। ওই দশকেই এনজিওগুলোর শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায় এবং এডাব নামে এনজিওগুলোর একটি ফোরাম সংগঠনও প্রতিষ্ঠিত হয়। বলতে গেলে আশির দশক থেকে নব্বইয়ের দশকে বৈদেশিক সাহায্যে ও অর্থায়নে এনজিওর কার্যক্রম সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে যেগুলো সরকারি সেবা প্রদান সংস্থার সমান্তরাল কাজ করতে থাকে। দেশীয় সংস্থাগুলোর মধ্যে ব্র্যাক, প্রশিকা, গণসাহায্য সংস্থা, গণস্বাস্থ্য, ভার্ক, বিভিএইচএসএস ইত্যাদি ব্যাপক আকারে কর্মসূচি গ্রহণ করে। আর তখনই এনজিওগুলোর ক্যাটাগরিও অনানুষ্ঠানিকভাবে হয়ে যায় যেমন-আন্তর্জাতিক, জাতীয় ও আঞ্চলিক সংস্থা।
প্রতিটি এনজিওর সেবা প্রদানের জন্য অভীষ্ট জনগোষ্ঠী হলো হতদরিদ্র বা দরিদ্র মানুষ। দেশের আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেশের পিছিয়ে পড়া এলাকা এবং পিছিয়ে পড়া জনগণ অধ্যুষিত এলাকায় সাধারণত এনজিওগুলো কর্মসূচি গ্রহণ করত। এর ব্যত্যয় যে ঘটেনি তা নয়। ঢাকা থেকে তদারকি, বিদেশিদের পরিদর্শনের সুবিধার জন্য ঢাকার আশপাশেও প্রকল্প নেওয়া হতো। উদাহরণস্বরূপ, নব্বই দশকে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায়ই ২২টি এনজিও কাজ করত, বর্তমানের অবস্থা জানা নেই। এসব কর্মসূচির ভিত্তিতে কোনো কোনো এলাকাকে এনজিও পল্লি হিসাবেও আখ্যায়িত করা হতো। দেশীয় এনজিও কার্যক্রম ব্যাপকভাবে শুরু হওয়াতে আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোর নীতিতে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়। তারা দেশীয় সংস্থার ক্ষমতায়নের জন্য ক্রমান্বয়ে নিজেদের কর্মসূচি গুটিয়ে আনতে শুরু করে এবং দেশীয় সংস্থাগুলোকে অর্থ ও কারিগরি সহায়তা দিতে থাকে। ফলে দেশীয় সংস্থা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা নীতিনির্ধারণী ও ডোনার হিসাবে সংস্থার কার্যক্রম ও লোকবলের দিক থেকে ছোট করে নিয়ে আসে। এনজিওগুলো ত্রাণ, পুনর্বাসন ও পুনর্গঠন থেকে বের হয়ে আশির দশক থেকে জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করে যেমন-অনানুষ্ঠানিক সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ, অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা (শিশু ও বয়স্ক), প্রাথমিক স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, গৃহায়ণ, ক্ষুদ্রঋণ, হাঁস-মুরগি-গবাদিপশু পালন, মৎস্য চাষ, কৃষি উন্নয়ন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা গঠন, নারীর ক্ষমতায়ন, ক্ষুদ্র ব্যবসা, গৃহায়ণ, পরিবেশ সুরক্ষা, অবকাঠামো উন্নয়ন ইত্যাদি অনেক উদ্ভাবনী কর্মসূচি বাস্তবায়িত হতে শুরু করে। তখন কোনো কোনো এলাকায় এনজিও কর্মীদের আনাগোনায় সারা দিনই মোটরসাইকেলের ঝনঝনানি ও মানুষের কলতান উচ্ছ্বাস লক্ষ করা যেত।
এনজিও কার্যক্রমে শুরুর দিকে যেহেতু নারীর ক্ষমতায়নের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হতো তাই নানা রকম নেতিবাচক কথা ও প্রপাগান্ডা সারা দেশেই ছিল। সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে এনজিও কর্মকর্তাদের মনস্তাত্ত্বিক সংকটও ছিল যা পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে কেটে যায়। অস্বীকার করার উপায় নেই, এনজিও পেশাজীবীদের প্রতি অন্যান্য সেক্টরের পেশাজীবীদের নেতিবাচক মনোভাব ছিল ও আছে। অনেকের ধারণা এনজিওতে বিদেশি ফান্ড এনে ভাগাভাগি করে খেয়ে ফেলে। দুর্নীতি নেই তা হলফ করে বলার সুযোগ নেই, তবে কোন সেক্টরে নেই সে প্রশ্নটিও তো পাশাপাশি চলে আসে। অসমর্থিত সূত্রে বলা যায়, অনেক ডোনার সরকারকে টাকা না দিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা বা ব্র্যাক-প্রশিকা ইত্যাদি বড় এনজিওকে দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করত বিভিন্ন কারণে। এর একটি কারণ এসব প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি কম হয় এবং যথাসময়ে তাদের কাছ থেকে জবাবদিহি পাওয়া যায়। নির্দিষ্ট সময়ে তারা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও শেষ করে। যা হোক, এবার আমরা এ দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিই।
এত এত এনজিওর এতশত কর্মসূচির বাংলাদেশে আর্থ-সামাজিক অবস্থার ওপর প্রভাব কী? এ রকম প্রশ্ন অনেকের মধ্যে দেখা যায়। এর কোনো বস্তু নিরপেক্ষ কোনো গবেষণা কি হয়েছে? আমার জানা মতে প্রত্যেক সংস্থাই কোনো না কোনোভাবে প্রকল্পের প্রভাব পরিমাপের গবেষণা করেছে, সর্বসাকুল্যে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হয়েছে কিনা জানা নেই। কর্মসূচিভিত্তিক মূল্যায়নে লক্ষিত জনগোষ্ঠীর ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়, নেতিবাচক তেমন কোনো প্রভাব সাধারণত দেখা যায় না। এসব গবেষণায় অনেকের মনে সংশয়-দ্বিধা থাকতে পারে। বলার সুযোগ নেই, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। তবে এটুকু বলা যায়, দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীরও উত্তরোত্তর উন্নতি হয়েছে বা হচ্ছে। এখানে এনজিওগুলোর ভূমিকা হলো, গ্রামীণ পর্যায়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে টাকার গতিশীলতা বৃদ্ধি, ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন, কর্মসংস্থানের বৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার নানা পথ অনুসন্ধান করার সুযোগ।
জাতিসংঘের বিভিন্ন এজেন্সি ডোনার হিসাবে কাজ করে এবং নিজেরাও কোনো কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর বড় অবদান হলো নীতিনির্ধারণে তাদের সহযোগিতা। দেশের উন্নয়নের জন্য তাদের অনেক পরামর্শ অনেক কার্যকরী ভূমিকা রেখে তা অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। এ নিবন্ধে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা সম্ভব হয়নি, এখানে দুটি উদাহরণ দিচ্ছি : কেয়ার বাংলাদেশে প্রথম চালু করে গ্রামীণ যোগাযোগের জন্য রাস্তা উন্নয়নের কাজ। গ্রামীণ যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে মানুষের মোবিলিটি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারিত হয়েছে। দ্বিতীয়ত প্রাথমিক শিক্ষার আগে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা যে গুরুত্বপূর্ণ এবং পৃথিবীর উন্নত দেশে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করে সরকারের সামনে তুলে ধরার পর নীতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং দীর্ঘকাল পর প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যার ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। দুর্যোগের ক্ষেত্রেও এনজিওগুলো যেভাবে কাজ করেছে এবং সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে অংশগ্রহণ করেছে তাতে দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ একটি রোলমডেলে পরিণত হয়েছে। এ রকম অনেক বিষয়ই আছে যেগুলো সরকারের নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে এনজিওগুলোর কার্যক্রম ও অ্যাডভোকেসি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে এবং এক সময় এনজিও ও সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে যে মনস্তাত্ত্বিক সংকট ছিল তা কেটে গিয়ে বর্তমানে বরং দুটি সেক্টরেই একই মনোভাবে একই সরল রেখায় অবস্থান করছে।
স্বাস্থ্য খাতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি কয়েকটি সংস্থা মা ও শিশু স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ ভূমিকা রেখে সর্বস্তরের জনগণকে সচেতন করে প্রসূতি ও শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে এ দেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ রেখেছে। হান্ড্রেড পার্সেন্ট স্যানিটেশন বা স্যানিটারি ল্যাট্রিন প্রতিস্থাপনের কনসেপ্টটি এনজিও থেকে শুরু হয়েছিল। এ কনসেপ্টটিই পরবর্তীকালে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বর্তমানে সারা দেশের মানুষই স্যানিটারি টয়লেট ব্যবহার করে। ফলে বাংলাদেশে কমিউনিকেবল ডিজিজ তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমেছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ যা অকপটে স্বীকার করতে হবে।
বাংলাদেশের বহুমুখী সমস্যার মধ্যে বেকার সমস্যা একটি প্রধান সমস্যা ছিল যা বর্তমানেও আছে। বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মসংস্থানের জন্য যথেষ্ট ছিল না বা এখনো নেই। এনজিও সেক্টরের একটি বড় ভূমিকা ছিল শিক্ষিত বেকারদের কমংস্থানের ব্যবস্থা করা। যদি এনজিও সেক্টর প্রতিষ্ঠিত না হতো তাহলে দেশে আরও হাহাকার বিরাজ করত এবং দেশের সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হতো। কয়েক লাখ লোক এ সংস্থায় চাকরি করে নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নের পাশাপাশি সংসারেরও উন্নতি করেছে। শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ এনজিও সেক্টরে জীবিকা নির্বাহের জন্য স্থান পেয়েছে। এনজিও সেক্টরের প্রশাসন ইনফরমাল ও ফ্লেক্সিবল হওয়াতে নতুন কনসেপ্ট ও উদ্ভাবনের জন্য সুযোগ রয়েছে এবং সৃষ্টিশীল ও মননশীল ব্যক্তিরা উদ্ভাবনমূলক কাজ খুব সহজেই করতে পারে। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো এনজিও সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী কাজের জন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উৎসাহিতও করে থাকে। এ কারণে এনজিওগুলো অনেক কাজের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা করে অনেক কিছু উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে; অনেক সরকারও অভিযোজন করেছে। প্রতিভাবান এনজিও প্রোফেশনালরা বিদেশের অনেক ধারণা বা কনসেপ্ট নিয়ে বাংলাদেশে গবেষণামূলক কাজ শুরু করে সাফল্য পেলে পরবর্তী সময় দেনদরবার করে সরকারকে অভিযোজন করতে উৎসাহিত করেছে বা করে এবং সম্ভাবনাময় মনে হলে সরকার গ্রহণও করেছে। অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রম এর একটি উদাহরণ হিসাবে দেওয়া যেতে পারে। কারণ, অংশগ্রহণমূলক ধারণাটি প্রথমে এনজিওতে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে।
অভীষ্ট জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে এনজিওর ভূমিকা কতটা সফল সেগুলো নিয়ে বিতর্ক থাকলেও দেশের অসংখ্য বেকারের কর্মসংস্থান এবং তাদের জীবিকা নির্বাহ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ জীবনযাপন করতে পেরেছে বা পারছে এ নিয়ে কোনো সংশয়-দ্বিধা নেই। এ জনগোষ্ঠীর মাধ্যমেও দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থেকেছে বা আছে। এনজিওতে মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য হিউজ বাজেটসহ অনেক উদ্যোগ থাকে, কর্মীদের প্রচুর প্রশিক্ষণ প্রদান করে মানবসম্পদ উন্নয়ন করে। ফলে অনেক কর্মী দেশে কাজ শুরু করে বিদেশে বিশেষজ্ঞ হিসাবেও চাকরি করছে এবং প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনতে সক্ষম হয়েছে।
অনেক ইতিবাচকের মধ্যে এনজিওর ভেতরে নেতিবাচক বিষয়ও আছে। প্রজেক্টভিত্তিক কর্মসূচি হওয়াতে কর্মীদের কেবল প্রজেক্টের জন্যই নিয়োগ দেওয়া হয় এবং প্রজেক্ট শেষ হলে শুরু হয় তাদের জীবনের চরম অনিশ্চয়তা, হতাশা ও অস্থিরতা। এমন প্রকল্প শেষে চাকরিহারাদের অনেকেই চাকরি জোগাড় করতে না পেরে যোগ্যতার তুলনায় অযোগ্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। কিছু এনজিও আছে বিশ-পঁচিশ বছর চাকরি হলে বিনা নোটিশে কর্মীদের হাতে অবসরের চিঠি ধরিয়ে দেয়। এ সেক্টরে প্রবাদসম অনেক প্রবচন তৈরি হয়েছে; যেমন-‘অফিসে নির্ধারিত সময়ে প্রবেশ করতে হবে কিন্তু বের হওয়ার কোনো সময় নেই। মাঝ রাতও হতে পারে। চাকরি পাওয়া যেমন সহজ, যাওয়া তার চেয়ে বেশি সহজ। কর্মকর্তাদের সঙ্গে মনোমালিন্য হলে পাতলা কাগজের হলুদ খাম হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়; যাও বাবা খেটে খাও।’ চাকরির অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা, ফান্ড ক্রাইসিস, স্বল্পমেয়াদের ও খণ্ডকালীন চাকরির জন্য কর্মী ও মধ্যম পর্যায়ের হাজার হাজার কর্মচারীকে হতাশা দুর্ভোগের মধ্যে দিনাতিপাত করে। অনেকের স্বপ্ন ও সাজানো-গোছানো সুন্দর ও সুখী সংসার পড়ে ভাঙনের কবলে একেই বলে এনজিওর নিষ্ঠুর অভিশাপ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
Copyright © 2024 Manabatar Kontho
Theme Customized By BreakingNews