ডক্টর দিপু সিদ্দিকী :
শুদ্ধাচারিতা হলো মানুষের চারিত্রিক উৎকর্ষের এক অন্যতম বৈশিষ্ট্য। শুদ্ধাচারী মানুষ নিজে যেমন সৎ থাকে, তেমনি অন্যদের প্রতিও ন্যায্য ও নৈতিক আচরণ প্রদর্শন করে। মানুষের জীবনে শুদ্ধাচারিতার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য, কারণ এটি সমাজের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সমাজে সুশৃঙ্খলতা, দায়িত্বশীলতা, এবং মানবিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শুদ্ধাচার অপরিহার্য।
বিশ্বের বিভিন্ন মনীষীর মতামতেও শুদ্ধাচারিতার গুরুত্ব বারবার উঠে এসেছে। যেমন মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, “নিজেকে পরিবর্তন করলেই পৃথিবী পরিবর্তন হবে।” এই বক্তব্যে স্পষ্টভাবে বুঝানো হয়েছে যে, ব্যক্তিগত চারিত্রিক উন্নয়ন সমাজ ও বিশ্বের সামগ্রিক উন্নয়নের ভিত্তি। শুদ্ধাচারিতা না থাকলে মানুষ সঠিক পথে চলতে অক্ষম হয়, ফলে সমাজে অরাজকতা সৃষ্টি হতে পারে।
শুদ্ধাচারের মূলনীতি হলো সত্যবাদিতা, দায়িত্ববোধ এবং পরার্থপরতা। একজন শুদ্ধাচারী মানুষ সবসময় সত্যের পক্ষে থাকে, যে কোনো পরিস্থিতিতেও নিজের আদর্শ এবং নৈতিকতা বজায় রাখে। আর শুদ্ধাচারিতার আরেকটি মূল দিক হলো দায়িত্বশীলতা। প্লেটো বলেছেন, “যে মানুষ দায়িত্বশীল নয়, সে স্বাধীনতার যোগ্য নয়।” দায়িত্বশীলতা ছাড়া স্বাধীনতার সঠিক ব্যবহার করা সম্ভব নয়, কারণ স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা বা উচ্ছৃঙ্খলতা নয়। বরং শৃঙ্খলা ও নিয়ম অনুসরণ করাই প্রকৃত স্বাধীনতা।
তরুণ প্রজন্মকে শুদ্ধাচারিতার দিকে ধাবিত করতে হলে, তাদের মনে শৃঙ্খলা ও নৈতিকতার গুরুত্ব তুলে ধরা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তরুণরা যদি শুদ্ধাচারী হয়, তবে তাদের মাধ্যমে সমাজে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে। ডক্টর দীপু সিদ্দিকীর একটি উদ্ধৃতি এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়, “স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা বা উচ্ছৃঙ্খলতা নয়। স্বাধীনতা মানে হচ্ছে শৃঙ্খলা ও নিয়ম অনুসরণ।”
শুদ্ধাচারের অভাব সমাজে নানা ধরণের অস্থিরতা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। ব্যক্তি, পরিবার, এবং সমাজে শুদ্ধাচারিতার চর্চা না থাকলে সামষ্টিক উন্নয়ন সম্ভব হয় না। দল-কানা মানসিকতা কিংবা সীমাবদ্ধ স্বার্থপরতা জাতির অগ্রগতির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। শুদ্ধাচারী মানুষ নিজের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে বৃহত্তর সমাজের কল্যাণে কাজ করে।
পরিশেষে, শুদ্ধাচার হলো জীবনের সঠিক পথ। শুদ্ধাচারিতার চর্চার মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে উন্নত মানুষে পরিণত করতে পারি এবং একটি কল্যাণকামী সমাজ গড়ে তুলতে পারি।
Leave a Reply