মোঃ জাহিদ হাসান।
মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকায় হাউজবোট ব্যবসার আড়ালে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি, “নৌ-ভ্রমণ” ও “শীতকালীন হিম উৎসব” এর নামে এখানে অসামাজিক কার্যকলাপ চালানো হচ্ছে। যদিও বিষয়টি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে এখনো কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
এদিকে হাউজবোটের সংখ্যা বাড়লেও নেই অনুমোদন
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আগে এখানে ছয়টি হাউজবোট ছিল, যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১টিতে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই ১১টি হাউজবোটের একটিরও যথাযথ অনুমোদন নেই। অনুমোদন ছাড়াই এগুলো পদ্মা নদী, শিমুলিয়া ঘাট, পদ্মা সেতুর আশপাশসহ বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
লৌহজংয়ের যে স্থানথেকে হাওর থেকে আশা হাউসবোর্ড গুলো পরিচালনা করা হয় বেজগাঁও ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আবু তাহের মৃধা বলেন, “এটি কোনো বাণিজ্যিক এলাকা নয়, এটি আমাদের সামাজিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত নারীদের ওয়েস্টার্ন কালচারের পোশাক ও আচরণ আমাদের এলাকায় বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে এলাকাবাসী মানববন্ধনের ডাক দিতে বাধ্য হবে।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, হাউজবোটগুলোর বেশ কয়েকটিতে রাতের আঁধারে অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। এসব বোটে ব্যক্তিগত কেবিন, আরামদায়ক বেডরুম, ওয়াশরুম এবং ডোর লক সিস্টেমসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকায় এগুলো অবৈধ কার্যকলাপের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আকাশ আহমেদ বিদ্যুৎ বলেন, “নৌ-ভ্রমণের নামে এখানে টাকা নিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে। এটি আমাদের সমাজের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।”
অন্যদিকে, হাউজবোট মালিকদের দাবি, তারা পর্যটকদের জন্য নিরাপদ ও সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা করেছেন। “ভ্রমণ পোকা” কোম্পানির ব্যবস্থাপক মো. ইমন হোসেন বলেন, “আমাদের হাউজবোটে শুধুমাত্র ফ্যামিলি ও বিবাহিত অতিথিদের জন্য সেবা দেওয়া হয়। এখানে কোনো অসামাজিক কার্যকলাপের সুযোগ নেই। তবে এখনো আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পাইনি, শিগগিরই অনুমোদন পাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।”
প্রশাসনের অবস্থান
গত ১ ফেব্রুয়ারি শিমুলিয়া ঘাট থেকে “শখের তরী” নামে একটি নতুন হাউজবোটের উদ্বোধন করা হয়। ট্যুরিস্ট পুলিশের ঢাকা রিজিয়নের পুলিশ সুপার নাঈমুল হক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। তিনি বলেন, “শখের তরীর সরকারি অনুমোদন আছে এবং এটি পর্যটন সেক্টরে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। তবে অনুমোদনবিহীন অন্য কোনো হাউজবোট এখানে চলতে পারবে না। আমি পদ্মা সেতু ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ মো. মামুনকে নির্দেশ দিয়েছি, যাতে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়।”
এদিকে, লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নেসার উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান,হাউজ বোট কর্তৃপক্ষ আমার কাছে এসেছিলেন আপনারা একটা জিনিস লক্ষ্য রাখবেন এখানে মব জাস্টিসের মত কোন ঘটনা যাতে না ঘটে
“স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, এখানে যেকোনো মুহূর্তে ‘মব জাস্টিস’-এর মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে। তাই দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। আমরা হাউজবোটগুলোর বৈধতা যাচাই করছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
পদ্মা উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির হোসেন বলেন, “স্থানীয়দের অভিযোগ আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে। আমরা হাউজবোটগুলোর কার্যক্রমের ওপর বিশেষ নজর রাখছি।”
স্থানীয়রা প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। তারা চান, পর্যটনের নামে অনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ হোক এবং এলাকার সামাজিক পরিবেশ রক্ষিত থাকুক। প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন কত দ্রুত পদক্ষেপ নেয় এবং লৌহজংয়ের পদ্মা নদী তীরবর্তী এলাকাকে অনৈতিক কর্মকাণ্ডমুক্ত করতে পারে কি না।
Leave a Reply