সময়ের চিত্র ডেস্ক:
ভারত মহাসাগরে সোমালীয় জলদস্যুদের কবলেপড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ এবং ওই জাহাজে থাকা এক ক্যাপ্টেনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে বলে জানিয়েছেন নৌ পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম। জলদস্যুদের হাতে আটক ২৩ নাবিককে উদ্ধারে ইতিবাচনক আলোচনা হয়েছে বলেও জানান তিনি। বুধবার (২০ মার্চ) গণমাধ্যমকে এ কথা বলেন তিনি।
নৌ পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর সঙ্গে প্রথমবারের মতো যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। জলদস্যুদের কাছে জিম্মি নাবিক ও ক্রুদের উদ্ধারের বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই নাবিক-ক্রুদের উদ্ধারের বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হবে। তবে আলোচনার শর্ত গোপনীয়তার স্বার্থে বাংলাদেশি মধ্যস্থ্যতাকারীর বিষয়ে তথ্য দেয়া হবে না বলেও জানান।
এর আগে জাহাজটি উদ্ধারের সবশেষ কোনো বার্তা কারও কাছেই ছিল না বলে জানানো হয়। সোমালিয়া পুলিশ এবং আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর সম্মিলিত দলের কমান্ডো অভিযান চালানোর কথা শোনা গেলেও জাহাজটির মালিকপক্ষ দাবি করেছিল, এ বিষয়ে কিছু জানে না তারা। আবার ১৬ মার্চ রাতের পর ওই জাহাজ থেকেও যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। এ অবস্থায় তৈরি হয় উভয় সংকট।
এদিকে জলদস্যুদের কবলেপড়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ ও ২৩ নাবিকের জিম্মি দশার আট দিন পার হয়েছে। জাহাজের মালিকপক্ষ বলছে, তাদের সাথে সবশেষ শনিবার (১৬ মার্চ) রাতে এক নাবিকের কথা হয়েছে। ওই সময় তিনি জানিয়েছেন সবাই সুস্থ আছেন। এরপর আর কারও সাথে যোগাযোগ হয়নি বলেই জানান কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম।
তিনি জানান, সমঝোতা নিয়ে এখনও পর্যন্ত জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। আবার সোমালিয়ার পুলিশ এবং আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর সম্মিলিত দলের উদ্ধার অভিযান পরিচালনার যে বিষয়টি শোনা গিয়েছিল, সে সম্পর্কেও তারা কিছু জানে না বলে দাবি করা হয়। এমন অবস্থায় দুশ্চিন্তায় পড়েন নাবিকদের পরিবার। তারা দ্রুত উদ্ধারের দাবি করেছেন।
জানা গেছে, শুক্রবার জলদস্যুদের নতুন দল জাহাজটির দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে নাবিকদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়।
এ অবস্থায়, অভিযান চালিয়ে জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধার কার্যক্রমকে সমর্থন করছে না মালিকপক্ষ এবং সরকার। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে বলে মনে করছে তারা। বিশেষ করে নাবিকদের জীবনহানির শঙ্কা করছে। একই মত পোষণ করছেন নৌ বিশেষজ্ঞরা। বলছেন, অভিযান না চালিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
অন্যদিকে ১২ মার্চ জাহাজ জিম্মির পর বেশ কয়েকবার অবস্থান পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ১৪ মার্চ রাতে সোমালিয়ার গারাকাদ উপকূল থেকে সাত নটিক্যাল মাইল দূরে দস্যুরা প্রথমে জাহাজটি নোঙর করে। এরপর গারাকাদ উপকূল থেকে সরিয়ে ১৫ মার্চ ৫০ নটিক্যাল মাইল উত্তরে জাহাজটিকে নিয়ে যায়। এরপর গদবজিরান উপকূল থেকে মাত্র চার নটিক্যাল মাইল দূরে জাহাজটির সর্বশেষ অবস্থান শনাক্ত করা হয়।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। সে সময় জাহাজটি সোমালিয়া উপকূল থেকে ৪৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছিল। দস্যুদের কাছে জিম্মি হয় ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক ও ক্রু।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সোমালিয়ার গারাকাড উপকূল থেকে ২০ মাইল দূরে জাহাজটি নোঙর করে। পরে সেটি আরও এগিয়ে উপকূলের ৭ মাইলের মধ্যে অবস্থান নেয়। কিন্তু শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটা নাগাদ জাহাজটি আরারও চলতে শুরু করে।
সর্বশেষ ২৩ নাবিকসহ জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজটিকে সোমালিয়ার গারাকাড থেকে গোদবজিরান উপকূলে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আগের অবস্থান থেকে এটি প্রায় ৫০ নটিক্যাল মাইল উত্তরে। বর্তমানে জাহাজটি উপকূল থেকে মাত্র ৪ নটিক্যাল মাইল দূরে রয়েছে।
Leave a Reply