মানবতার কন্ঠ ডেস্ক:
সারাদেশে ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা, গণগ্রেপ্তার, হামলা, মামলা, গুম ও খুনের প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি সমর্থনে শিক্ষার্থী ও আইনজীবীরা ঢাকা, সিলেট, চট্রগ্রাম, যশোর, রাজশাহী, খুলনা,বগুড়া, বরিশালসহ সারাদেশে বিক্ষোভ করেছে।
ঢাকা
আজ বুধবার দুপুরের দিকে হাইকোর্টের মাজার রোডের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ৪ জনকে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে আটক করেছে পুলিশ।
‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এদিন হাইকোর্টের মাজার রোডের সামনে প্রথমে ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থী অবস্থান নেন। পরে আরও ৭০ থেকে ৮০ জন শিক্ষার্থী তাদের সঙ্গে যোগ দেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের একটি মিছিল যোগ দিতে এলে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। এগুতে না পেরে সেখানেই বসে পড়েন শিক্ষকরা।
এর এক পর্যায়ে কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ৪ জনকে আটক করে পুলিশ। তাদের সেখান থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় এক নারী শিক্ষার্থী পুলিশ ভ্যানের সামনে ব্যারিকেড দেওয়ার চেষ্টা করেন।
ঢাবির সাদা দলের আহ্বায়ক লুৎফর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, রোড ফর জাস্টিস কর্মসূচিতে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এসেছেন। আমরা সংহতি জানাতে এসেছি। পুলিশ আমাদের আটকে দিয়েছেন আমরা বসে পড়েছি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে পুরান ঢাকার নিম্ন আদালতে বিক্ষোভ করেছেন আইনজীবীরা।
বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুর পৌনে ১টার দিকে আইনজীবীদের একটি দল ঢাকা আইনজীবী সমিতির সামনে থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন।
বিক্ষোভ মিছিলটি চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে কিছুক্ষণ অবস্থান করে আবার ঢাকা আইনজীবী সমিতির দিকে চলে যায়।
এ সময় তারা ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ এর সমর্থনে বিভিন্ন শ্লোগান দেন।
এদিকে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিকে ঘিরে ঢাকার নিম্ন আদালতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। তারা আদালতের প্রধান ফটকগুলো বন্ধ করে রাখে। শুধু আইনজীবী, সহকারি ও কাজে এসেছেন এমন ব্যক্তিদের আদালত চত্বরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে।
সিলেট
সিলেটে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলছে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের দিকে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করছে।
আজ বুধবার দুপুর ১টার দিকে এই সংঘর্ষ শুরু হয়।
বিক্ষোভকারীরা পদযাত্রা নিয়ে সুবিদ বাজারে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে সামনে এগোলে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ শুরু করে।
এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল ১১টা থেকে শাবিপ্রবির প্রধান ফটকে অবস্থান নিতে শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। পরে সেখানে আগে থেকেই অবস্থান নেওয়া পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এরপর আরও শিক্ষার্থী যোগ দিয়ে স্লোগান দিতে শুরু করে। তখন পুলিশ ক্যাম্পাসের ভেতরে চলে যায়। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ২০০-৩০০ শিক্ষার্থী পদযাত্রা নিয়ে সেখান থেকে শহরের কোর্ট পয়েন্টের দিকে রওনা দেন। সেখান থেকে পদযাত্রা নিয়ে তারা সুবিদ বাজারের দিকে যান।
চট্রগ্রাম
পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে অবস্থান নিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় অন্তত ২০০ বিক্ষোভকারী সেখানে অবস্থান নেন।
সারাদেশে ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা, গণগ্রেপ্তার, হামলা, মামলা, গুম ও খুনের প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি ঘিরে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সকাল ১১টা থেকেই বিক্ষোভকারীরা সেখানে জড়ো হতে শুরু করেন। তারা যাতে আদালত চত্বরে যেতে না পারে, সেজন্য পুলিশ সেখানে ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। এরপর তারা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে আদালত চত্বরে গিয়ে অবস্থান নেন।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল ওয়ারীশ বলেন, কারফিউ শিথিল হলেও সভা-সমাবেশ না করাসহ সাধারণ যে বিধি-নিষেধ, সেগুলো তো কার্যকর। তাই যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
যশোর
যশোরে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এরপর সেখান থেকে অন্তত ৬ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়।
৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালনের সময় বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে এ লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটে।
আটক ছাত্ররা হলেন: রনি, আকাশ, রানা, তৌহিদুল, রিয়াজ ও ইব্রাহিম।
জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা হত্যা, গণগ্রেফতার, হামলা, মামলা, গুম এবং খুনের প্রতিবাদে ও জাতিসংঘের তদন্তপূর্বক বিচারের দাবিতে এবং ছাত্র সমাজের ৯ দফা দাবি আদায়ের সকাল থেকে যশোরের শহরের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন।
একপর্যায়ে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে যশোর পৌরসভার সামনে জড়ো হন। এ সময় মিছিলের চেষ্টা করলে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এরপর শহরের ঈদগাহ মোড় থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের দিকে অগ্রসর হয়। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে তারা সেটা উপেক্ষা করে মিছিল নিয়ে অগ্রসর হতে থাকেন। এরপর যশোর পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে চার রাস্তার মোড়ে মিছিলটি পৌঁছায়। সেখানে একাধিক কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্য ও ডিবি পুলিশের সদস্যরা এলোপাতাড়ি লাঠিচার্জ করে ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এর আগে শহরের ঈদগাহ মোড় এলাকা থেকে রনি, আকাশ, রানা, তৌহিদুল, রিয়াজ ও ইব্রাহিম নামে ৬ শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ।
বগুড়া
‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বগুড়ায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
বুধবার (৩১ জুলাই) বেলা ১১ টার পর থেকে দুপুর পৌনে একটা পর্যন্ত শহরের জলেশ্বরীতলা, আদালত ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনের সড়কে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা তাদের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ পালনের জন্য রোমেনা আফাজ সড়কের কালী মন্দির এলাকায় জড়ো হন।
এরপর তারা আদালতের দিকে অগ্রসর হতে চাইলে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন। তখন আদালত চত্বর থেকে ২০ গজ দূরে রোমেনা আফাজ সড়কে বসে পড়েন। এখানে প্রায় আধাঘণ্টা অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।
এরপর তারা জলেশ্বরী তলা এলাকা থেকে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে মিছিল নিয়ে শহরের একাধিক সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। এ সময় কঠোর অবস্থান নিতে দেখা যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের।
বরিশাল
বরিশালে শিক্ষার্থীদের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে দুই দফা লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এতে চার সাংবাদিকসহ ১০ জন আহত হয়েছেন।
আজ বুধবার দুপুর ১১টার দিকে শহরের দুটি পয়েন্টে—সদর রোডের অশ্বিনীকুমার হলের সামনে ও জজ কোর্টের সামনে ফজলুল হক এভিনিউতে আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ।
এসময় কমপক্ষে ২০ জন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ।
ঘটনাস্থল থেকে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, দুপুর ১১টার পর কাঠপট্টি সড়কের মুখে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি অংশ মিছিল করার চেষ্টা করলে পুলিশ শুরুতে বাধা দেয়।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সেসময় বেশ কয়েকজন অভিভাবকও এই আন্দোলন কর্মসূচিতে ছিল। পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বাদানুবাদের এক পর্যায়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পুলিশ টানাহেঁচড়া করে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি শুরু হয়।
এক পর্যায়ে পুলিশ সিটি কলেজের গলির মুখে শিক্ষার্থীদের আটকে রাখে।
পরে কয়েকশ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী এক জোট হয়ে সদর রোডে অবস্থান করলে পুলিশ শুরুতে তাদের ধাওয়া দেয় পরে আচমকা লাঠিচার্জ শুরু করে।
এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের ওপরেও লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এতে কমপক্ষে চারজন সাংবাদিক আহত হন।
লাঠিচার্জের প্রতিবাদে সাংবাদিকরাও সদর রোডে কিছু সময় অবস্থান করেন। আহত সাংবাদিকরা শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বরিশাল জজ কোর্টের সামনে, ফজলুল হক এভিনিউ সড়কে অবস্থান নেয়। এসময় পুলিশ দ্বিতীয় দফায় শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে।
খুলনা:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফা দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে খুলনা মহানগরী। ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় সেখান থেকে পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে।
বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুরে শিক্ষার্থীরা এ আন্দোলন শুরু করেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন।
স্থানীযরা জানান, বিক্ষোভকারীদের তোপের মুখে সাতরাস্তার মোড়ে থাকা পুলিশের দুটি গাড়ি পিছু হটলেও দুপুর সোয়া ২টার দিকে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষ শুরুর পর পুলিশ কাঁদানেগ্যাস নিক্ষেপ করে ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পুলিশ নগরীর শান্তিধাম মোড়, রয়্যাল মোড়, সাতরাস্তা মোড়, ফুল মার্কেট এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়।
এ বিষয়ে ওসি মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘মঙ্গলবারই আমাদের ঘোষণা দেওয়া ছিল আর কোনো ছাত্রকে আন্দোলন করতে দেওয়া হবে না। তারা আইন নিজেদের হাতে নিয়েছে। আমাদের ওপর হামলা করেছে। পুলিশ বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
রাজশাহী
রাজশাহীতে পুলিশের গাড়িতে দুর্বৃত্তদের হামলা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় পুলিশের কোনো সদস্যের হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুরে নগরীর মহিষবাথান এলাকায় রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) গাড়ি লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা।
এ সময় গাড়ির সামনের কাচের কিছু অংশ ইট পাটকেলের আঘাতে ভেঙে যায়। পরে পুলিশ আত্মরক্ষাতে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে আটক করেছে রাজপাড়া থানা পুলিশ। তবে আটককৃতদের তাৎক্ষণিক নাম-পরিচয় এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।
পুলিশ জানায়, রাজপাড়া থানার ওসির গাড়ি টহলরত অবস্থায় ছিলো। এ সময় আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। পরবর্তীতে অতিরিক্ত পুলিশ এসে দুর্বৃত্তদের ধরতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায়।
এ বিষয়ে রাজপাড়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, ‘এই ঘটনায় কোনো পুলিশ সদস্য আহত হননি। তবে এ ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।’
Leave a Reply