নিজস্ব প্রতিবেদক:
ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ খুলেছে সব ধরনের অফিস। গত কয়েক দিনের বন্দিদশা থেকে বের হয়ে কাজে যোগ দিতে পারায় জনমনে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। সাধারণ মানুষ বলছেন, আন্দোলনের নামে গত কয়েকদিন রাজধানীতে যে দৃশ্য সৃষ্টি হয়েছিল তা ছিল ভয়ঙ্কর। মানুষ ঘর থেকে রাস্তায় বের হতে ভয় পাচ্ছিল।
তারা বলছেন, সাধারণ মানুষ চায় স্বস্তি। মানুষ যাতে স্বাভাবিকভাবে ঘর থেকে বের হয়ে প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করতে পারে তার নিশ্চয়তা চায়। জ্বালাও-পোড়াও, সম্পদ ধ্বংস করা সন্ত্রাসীর কাজ। যারা এসব কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
শিক্ষার্থীদের কোট আন্দোলনের মধ্যে গত বুধবার এক দল আন্দোলনকারীর তাণ্ডবে রাজধানীজুড়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়। রাতে দুষ্কৃতিকারীরা হাফিন ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজা পুড়িয়ে দেয়। রাতভর যাত্রাবাড়ী এলাকায় চলে সংঘর্ষ।
বৃহস্পতিবারও টোলপ্লাজায় আগুন দেয়া হয়। সেইসঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলে চালানো হয় তাণ্ডব। আগুন দেয়া হয় একাধিক পুলিশ বক্সে। পরিস্থিতি সামাল দিতে একপর্যায়ে কারফিউ জারি করে সরকার। সেইসঙ্গে নামানো হয় সেনাবাহিনী। এতে অনেকটাই ঘরবন্দি হয়ে পড়েন মানুষ। প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে খুব একটা বের হননি। তবে সেনাবাহিনী রাস্তায় নামার পর অল্প সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। ফলে শিথিল করা হয়েছে কারফিউ।
তিন কার্যদিবস অফিস বন্ধ থাকার পর বুধবার আবারও খুলেছে অফিস। ব্যাংকে চলছে লেনদেন। শেয়ারবাজারেও লেনদেন শুরু হয়েছে। খুলেছে বিমার অফিস। সচিবালয়েও চলছে স্বাভাবিক কার্যক্রম। রাস্তায় গণপরিবহনও চলাচল করছে। গণপরিবহনের চাপে কোথাও কোথাও যানজটও সৃষ্টি হচ্ছে।
মতিঝিলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমার বাসা মিরপুর-১০ নম্বরে। মেট্রোরেলে করে অফিসে আসা-যাওয়া করতাম। কিন্তু দুষ্কৃতিকারীরা আগুন দেওয়ায় এখন মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। তাই বাসে করে অফিসে এলাম।
তিনি বলেন, পরিস্থিতি দেখার জন্য একদিন রাস্তায় নেমেছিলাম। দুষ্কৃতিকারীদের তাণ্ডব দেখে হতবাক হয়েছি। আমার বাসা রাস্তা থেকে খুব বেশি দূরে নয়। সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকতাম। পরিস্থিতি খুবেই ঘোলাটে ছিল। সেই সময় পার হয়ে এখন আমরা স্বাভাবিক সময়ে ফিরে এসেছি। মনে স্বস্তি পাচ্ছি। আমরা কোনো জ্বালাও-পোড়াও চাই না। আমার স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চাই।
আরেক চাকরিজীবী মো. হামিদুজ্জামান বলেন, আন্দোলনের নামে যেভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে, তা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। হানিফ ফ্লাইওভারে আগুন দেওয়া হয়েছে, মেট্রোরেল স্টেশনে আগুন দেওয়া হয়েছে, সেতু ভবন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, বিটিভিতে আগুন দেওয়া হয়েছে, এক্সপ্রেসওয়েতে আগুন দেওয়া হয়েছে। এসব কোনো দেশপ্রেমিকের কাজ হতে পারে না। এগুলো সন্ত্রাসী কার্যক্রম। যারা এসব করেছেন তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত।
তিনি বলেন, আন্দোলনের নামে রাজধানীজুড়ে যে তাণ্ডব চালানো হয়েছে তা কোনো সুস্থ মানুষের কাজ হতে পারে না। দৃষ্কৃতকারীদের তাণ্ডবে পরিস্থিতি এমন হয়েছিল, ঘর থেকে বের হওয়ায় মানুষের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। সবার মনেই অজানা আতঙ্ক বিরাজ করতে থাকে। এখন ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে।
এদিকে কারফিউ জারি হওয়ায় গত রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। ফলে টানা তিন কার্যদিবস অফিস বন্ধ থাকে। কারফিউ শিথিল করে বুধবার (২৪ জুলাই) থেকে সরকারি-বেসরকারি অফিস সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়া হয়েছে। আজ ও আগামীকাল (২৫ জুলাই) সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিসের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত।
জরুরি পরিষেবা যেমন বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস ও বন্দরগুলোর কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা, টেলিফোন, ইন্টারনেট, ডাকসেবা এবং এ-সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীরা এ সময়সূচির আওতার বাইরে থাকবেন। এ ছাড়া হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এ সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মী, চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মী, ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম বহনকারী যানবাহন ও কর্মীরাও এ সময়সূচির আওতার বাইরে থাকবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা অনুযায়ী, যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সব ব্যাংকের কিছু শাখা বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকবে ও সীমিত আকারে সেবা দেবে। বুধ ও বৃহস্পতিবারের জন্য এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোন কোন শাখা খোলা থাকবে তা নির্ধারণ করে ব্যাংকগুলো নিজেরাই।
Leave a Reply