সোমালিয়ার বন্দরে এক সপ্তাহ ধরে জিম্মি থাকা বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহতে যে কোনো সময় বিস্ফোরণের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। জাহাজটিতে থাকা ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লাই এই আশঙ্কার মূল কারণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়লা দাহ্য জাতীয় খনিজ পদার্থ, এগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ না করা গেলে বিস্ফোরণের ঝুঁকি আছে।
এদিকে, জিম্মি করার এক সপ্তাহ হতে চললেও, দস্যুদের পক্ষ থেকে এখনও যোগাযোগ না করায় কোনো অগ্রগতি হয়নি নাবিকদের উদ্ধারের আলোচনা। এর মধ্যে বারবার পরিবর্তন করা হচ্ছে জাহাজটির অবস্থানও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাগরে বাল্ক জাহাজে কয়লা পরিবহনে ৫ ধরনের বিপদের শঙ্কায় কিছু নিরাপত্তা পদক্ষেপ মেনে চলতে হয়। প্রতি ২৪ ঘণ্টায় জাহাজের খোলের ভেতরে মিথেন, কার্বন মনোক্সাইড এবং অক্সিজেনের পরিমাপ নিতে হয়। বের করে দিতে হয় নির্ধারিত মাত্রার বেশি গ্যাস।
তারা বলছেন, বদ্ধ জায়গায় কয়লা থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছড়িয়ে পড়া মিথেনের পরিমাণ বাড়লে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এ ছাড়া কার্বন মনোক্সাইড বেড়ে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে নাবিকদের জীবনের ঝুঁকিও থাকে।
এ বিষয়ে মাস্টার মেরিনার ক্যাপ্টেন এম আনাম চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, মিথেন খুবই দাহ্য একটি গ্যাস। যেকোনো সময় এতে আগুন ধরতে পারে। সাধারণত এমন পরিস্থিতিতে আমরা কাউকে ডেকে সিগারেটও খেতে দেই না। কারণ, সামান্য সিগারেটের আগুন থেকে সেখানে বড় বিস্ফোরণ হতে পারে।
প্রতি ২৪ ঘণ্টায় কয়লার কনসেন্ট্রেশন মেপে দেখতে হয়। এটি বিস্ফোরণের মাত্রার ওপরে উঠে গেলে ফোর্স মেইনটেইন করতে হয়। ফোর্স মেইনটেইন করে মাত্রাতিরিক্ত গ্যাস বের করে দিতে হয়। এটা ২৪ ঘণ্টার একটা প্রক্রিয়া।
মেরিটাইম খাতে কয়লাবাহী জাহাজ ঝুঁকিপূর্ণ কার্গো হিসেবে পরিচিত। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, এ ধরনের জাহাজ তদারকির জন্য বিশেষ নির্দেশনা থাকলেও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে এমভি আব্দুল্লাহর নাবিকদের কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
আজ সোমবার (১৮ মার্চ) দুপুরে জাহাজ মালিক প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘জাহাজে যেহেতু আমাদের টেকনিক্যাল পারসন আছে, সুতরাং জলদস্যুরা সবসময় এই করণীয়টুকু করবেন। কারণ, আমরা মনে করছি, স্বার্থরক্ষা, জাহাজ নিরাপদ ও আবাসস্থল নিরাপদ রাখার স্বার্থে নাবিকদের সহযোগিতা করবেন জলদস্যুরা।
এর আগে, সোমালিয়ার দস্যুদের হাতে জিম্মি হয়েছিল একই মালিকের এমভি জাহানমণি নামের একটি জাহাজ। মো. ইদ্রিস নামে ওই জাহাজের এক নাবিক জানিয়েছেন, তাদের যখন বন্দি করে রাখা হয়, তখন কোনো কাজ করতে দেয়া হয়নি। এর ফলে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে কয়লায় বিম্ফোরণের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগর থেকে গত মঙ্গলবার (১২ মার্চ) এমভি আবদুল্লাহ নামে বাংলাদেশি একটি জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালিয়ার জলদস্যুরা।
Leave a Reply