ক্ষমতাসীন দল রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা মুছে ফেলায় একটি ‘একদলীয়’ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। দেশে আর কোনো রাজনীতি অবশিষ্ট নেই।’’ রাজধানী ঢাকায় নিজের অফিসে বসে গত সপ্তাহে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রয়টার্সের সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হয়েছেন। কিন্তু দেশের প্রধান বিরোধীদল ওই নির্বাচন বয়কট করে।
ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করার কৃতিত্ব দেওয়া হয় ওই প্রতিবেদনে। ২০০৭ সালে নিজের রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা প্রকাশের পর বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন সরকারের তোপের মুখে পড়েন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ব্যাপক দুর্নীতিতে জড়িত বলে অভিযোগ করেন ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেলজয়ী ইউনূস। তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে প্রকৃত রাজনৈতিক বিরোধীদের ঘাটতি রয়েছে।’’
নিজের অফিসে বসে ইউনূস রয়টার্সকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে আর কোনো রাজনীতি অবশিষ্ট নেই। এখানে কেবল একটি দলই সক্রিয় এবং তারাই সবকিছুই দখল করেছে। তারা সবকিছু করছে, তাদের পথেই নির্বাচন করছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘তারা নিজেদের লোকদের বিভিন্ন রূপে নির্বাচিত করছে— উপযুক্ত প্রার্থী, ডামি প্রার্থী, স্বতন্ত্র প্রার্থী। আর এসবই একই দলের।’’
ওই মন্তব্যের জবাবে বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, তিনি ইউনূসের মন্তব্যের বিষয়ে পুরোপুরি একমত নন।
টেলিফোনে রয়টার্সকে আনিসুল হক বলেন, ‘‘কেবল আমিই নই বরং দেশের জনগণও তার মতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করবে।’’ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই মন্তব্যকে দেশের জনগণের জন্য ‘‘অপমানজনক’’ বলে অভিহিত করেছেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘এই দেশে গণতন্ত্র পুরোপুরি সচল রয়েছে।
নির্বাচনের ঠিক আগে ঢাকার একটি আদালত শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে ইউনূসকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন। তবে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউনূস।
যদিও সেই মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন এবং তাকে কারাগারে যেতে হয়নি। ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন ও দুর্নীতির আরও শতাধিক অভিযোগ রয়েছে। তবে এসব অভিযোগকে ‘‘একেবারে অযৌক্তিক, বানানো গল্প’’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।
নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে মিথ্যা বলে ইউনূস দাবি করলেও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ইউনূস দেশের সর্বোচ্চ আদালতে গেছেন, সেখানে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে।
ইউনূসের সমর্থকরা বলছেন, অতীতে ‘‘নাগরিক শক্তি’’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা করেছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যে কারণে বাংলাদেশের সরকার তাকে হয়রানি করছে। ইউনূস প্রশ্ন তুলে বলেন, একজন নাগরিকের রাজনৈতিক দল করার চেষ্টা করা কি অপরাধ? রাজনীতির জন্য উপযুক্ত নন বুঝতে পেরে মাত্র ১০ সপ্তাহ পর দল গঠনের চিন্তা-ভাবনা বাদ দেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
শান্তিতে এই নোবেলজয়ী বলেন, বাংলাদেশে প্রতিযোগিতামূলক রাজনৈতিক আবহ পুনরায় জাগিয়ে তোলা কঠিন হবে। রাজনীতিকে পনরুজ্জীবিত করাটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক হবে। কারণ আমরা এটাকে এমন এক জায়গায় নিয়ে এসেছি, যেখানে এটা পুরোপুরি হারিয়ে গেছে।
Leave a Reply