আফরোজা তালুকদার
সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের সম্পদ ক্রোকের আদেশ এবং তার বিদেশে চলে যাওয়া নিয়ে আলোচনার মধ্যেই জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের চাপে সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে।
সরকার ও আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দুর্নীতি, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের সম্পর্কের যে টানাপড়েন চলছে, তা থেকে উত্তরণের প্রথম ধাপ হলো বেনজীরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য পর্যায়ক্রমে এমন আরও কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে সরকার।
এ ছাড়া সরকারের সাবেক এক মন্ত্রী দেশ সাংবাদিকদের বলেন, দুর্নীতিবিরোধী এমন পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র আর কোনো চাপ দিলে সরকার যাতে বলতে পারে একটা বাহিনীর প্রধানকেও শেখ হাসিনার সরকার ছাড় দেয়নি। এর মধ্য দিয়ে এ উদাহরণটা সৃষ্টি করা হলো। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ নতুন করে সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্র সৃষ্টি করল বেনজীরকে দিয়ে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের টানাপড়েন তৈরি হয়। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা জানিয়ে সরকারকে চাপ দেয়। গত বছর মে মাসে ভিসানীতি ঘোষণার পর জুলাইতে তা প্রয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়। বছরের শেষদিকে ঘোষণা করা হয় শ্রমনীতি। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি প্রতিনিধিদল ঢাকা সফর করে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের চাপ উপেক্ষা করেই নির্বাচন করে সরকার গঠন করে ফেলে।
গত ১৪ মে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ঢাকা সফরে আসেন। ১৫ মে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আর পেছনে তাকাতে চায় না, বরং সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার জন্য সামনে তাকাতে চায়। তার এ কথায় আওয়ামী লীগ আশাবাদী হলেও সরকারের মধ্যে সতর্কতা রয়েছে।
লুর সফর নিয়ে তখন আওয়ামী লীগ ও সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চায়। তবে সরকারকে কীভাবে চাপে রাখা যায় সে অবস্থান থেকে দেশটি সরে এসেছে সেটা বলা যাবে না। অর্থাৎ দুর্নীতি, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, শ্রম আইনের মতো বিষয়গুলোতে যুক্তরাষ্ট্র তার নীতি থেকে সরে যাবে না, সে কথা সরকার জানে।
সভাপতিম-লীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র অবাক হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ডোনাল্ড লুর সফর নতুন ইস্যু, নতুন কৌশল নিয়ে। তার দাবি, নতুন কৌশলে অনেক কিছুই তো থাকতে পারে।
Leave a Reply