হোটেলে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের ধারণা– মনির, স্ত্রী নাসরিন আক্তার স্বপ্না ও ছেলে নাঈম হোসেনের মৃত্যু হয়েছে বিষক্রিয়ায়। তবে সাধারণত ‘ফুড পয়জনিং’ বলতে যা বোঝায়, তেমন কিছু হলে প্রায় একই সময় তিনজনের মৃত্যু হওয়ার কথা না। এ ছাড়া যদি রেস্তোরাঁর খাবারে বিষক্রিয়া থাকত, তাহলে আরও অসুস্থ কিংবা মৃত্যুর খবর পাওয়া যেত। সন্দেহ করা হচ্ছে খাবারের সঙ্গে বিষ মেশানো হতে পারে। তবে কে বা কারা এই কাজটি করেছেন তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম সমকালকে বলেন, আদ্-দ্বীন হাসপাতালে দু’জনকে মৃত অবস্থায় নেওয়া হয়েছিল। হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়ার পরই মারা যান মনির হোসেন।
প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, বিষক্রিয়ায় এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তবে এটি খাবারের সঙ্গে ছিল, নাকি কেউ মিশিয়ে দিয়েছে তা তদন্ত করা হচ্ছে। রেস্তোরাঁ ও আবাসিক হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত মনিরের সঙ্গে ফোনে একাধিক ব্যক্তির কথা হয়। এই তালিকায় স্বজন রয়েছে। পরিবহন ব্যবসা ছাড়াও বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তাঁর। বাস কিংবা অন্য কোনো সম্পদ নিয়ে তাঁর সঙ্গে কারও ঝামেলা আছে কিনা তা দেখা হচ্ছে। সন্দেহজনক জায়গায় কাজ করছে পুলিশ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মনির নব্বইয়ের দশকে শ্রমিক ভিসায় সৌদি আরবে যান। পরে দেশটিতে ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করেন। বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেন তিনি। সেই অর্থ দিয়ে গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার দেহলায় এবং ঢাকা কেরানীগঞ্জে সম্পদ গড়েন। রামগঞ্জ-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে তার মালিকানায় পাঁচটি যাত্রীবাহী বাস রয়েছে। কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদে ২০১২-১৩ সালে তিনতলা ও পাঁচতলা দুটি বাড়ি কেনেন।
এই বাড়ি থেকে প্রতি মাসে প্রায় দেড় লাখ টাকা ভাড়া ওঠে। বাড়ি দুটি দেখভাল করেন তাঁর দূর সম্পর্কের চাচা একই গ্রামের রফিকুল ইসলাম। এই বাড়ি কেনার জন্য সে সময় এক কোটি টাকা বিদেশ থেকে রফিকুলের ব্যাংক হিসাবে পাঠিয়েছিলেন তিনি। চাচা তাঁর খুব বিশ্বস্ত ছিলেন। দেশে তাঁর সব সম্পদের হিসাব তিনি ছাড়াও স্ত্রী স্বপ্না এবং কেয়ারটেকার রফিকুল জানতেন।
শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলে নাঈমের চিকিৎসা করানোর জন্য তাকে নিয়ে মনির ও স্ত্রী স্বপ্না শনিবার গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় আসেন। ওই দিন চিকিৎসকের দেখা না পাওয়ায় মগবাজার মোড়-সংলগ্ন সুইট স্লিপ আবাসিক হোটেলে ওঠেন। তাঁর ঘনিষ্ঠজন এবং বাড়ি দেখভালের দায়িত্বে থাকা রফিকুল রাত ৮টা পর্যন্ত হোটেলে অবস্থান করেন। তাদের খাবার কিনে এনে দেন তিনি। রাত ৮টার পর চলে যান। রাত ১০টায় ফোন পেয়ে মনির বাইরে বের হন। ঘণ্টাখানেক পর পানি এবং আবারও খাবার নিয়ে হোটেলে আসেন। সেই খাবার খান তারা। রাতেই স্ত্রী-সন্তানসহ মনির অসুস্থ হয়ে পড়েন। বমি করেন সবাই।
পরদিন সকাল ৬টা ৩৬ মিনিটে তিনি রফিকুলকে ফোন করে অসুস্থতার কথা জানিয়ে তাঁকে দ্রুত হোটেল আসতে বলেন। সাড়ে ৭টায় রফিকুল সেখানে আসেন এবং মগবাজার মোড় এলাকার একটি ফার্মেসির এক কর্মচারীকে হোটেলে নিয়ে যান। ফার্মেসির ওই ব্যক্তি তাদের ওষুধ দিয়ে বের হয়ে যান। অসুস্থতার খবর শুনে রফিকুলের মেয়ে হোটেলে আসেন। স্ত্রী-সন্তানসহ মনির অসুস্থ হলেও সে খবর হোটেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জানাননি তিনি এবং রফিকুল। বেলা ১১টার পর যখন প্রথমে অসুস্থ স্বপ্নাকে রফিকুল ও তাঁর মেয়ে আদ্-দ্বীন হাসপাতালে নিয়ে যান, তখন হোটেলের কর্মচারীরা বিষয়টি জানতে পারেন। পরে নেওয়া হয় মনির ও তাঁর ছেলে নাঈমকে।
খবর পেয়ে পুলিশ আদ্-দ্বীন হাসপাতাল থেকে রোববার রাতে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। সোমবার লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। রাতে তিনজনের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান স্বজন।
সোমবার রাতে রমনা থানার এক কর্মকর্তা জানান, মামলা হয়নি, তবে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। রোববার রফিকুল, তাঁর মেয়ে ও মেয়ের স্বামীকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে রফিকুলকে থানায় রেখে অপর দু’জনকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
মনিরের চাচাতো ভাই জাকির হোসেন বলেন, মনির প্রায় ৩০ বছর সৌদিপ্রবাসী ছিলেন। তাঁর তিন ভাইও প্রবাসী। বড় ভাই নুরুল আমিন ইতালি থেকে সোমবার সন্ধ্যায় দেশে ফেরেন
Discover more at Max-Zero
Powered by Max-Zero
Leave a Reply