1. nurnobi.kuet16@gmail.com : Md Nur Nobi Khan : Md Nur Nobi Khan
  2. admin@manabatarkontho.com : admin24 :
  3. afruja@gmail.com : Afruja Talukder : Afruja Talukder
  4. manabatarkontho@gmail.com : Afroja Talukder : Afroja Talukder
মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ০৯:৫২ অপরাহ্ন

সংবাদমাধ্যমের কাজ সাংবাদিকতা, নাকি পুলিশগিরি?

  • প্রকাশিত : সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫
  • ৩৮ বার পড়া হয়েছে

একজন পথচলতি সাধারণ মানুষ। রাস্তার পাশে মোটরসাইকেলের ওপর বসে কথাগুলো বলছিলেন। তাঁর সামনে বাড়ানো ছিল নানা লোগো সংবলিত একাধিক বুম। ওই বুম‑সংশ্লিষ্ট দুই‑একজনকে আবার দেখা গেল মোটরসাইকেলে বসা লোকটির পেছন থেকে ক্যামেরা ধরতে!

আর এসবের মাঝেই মোটরসাইকেলটির সেই চালক বলছিলেন তাঁর মিডিয়াতে আসতে না চাওয়ার কথাটি। তাতে অবশ্য সামনে বুম ও পেছনে ক্যামেরা ধরা তথাকথিত সাংবাদিকদের থোড়াই কেয়ার। উল্টো কোনো না কোনোভাবে ওই চালকের মুখ থেকে কিছু না কিছু শব্দ বের করার অনুরোধ, উপরোধ বা জোরজবরদস্তি চলছিল তখন।

বোঝাই যাচ্ছিল যে, কোনো এক চেকপোস্টে ভদ্রলোকটিকে আটকানো হয়েছিল। তাঁর মাথায় হেলমেট দেখা যায়নি। হয়তো হেলমেট না থাকা বা অন্য কোনো ট্রাফিক আইন ভাঙার কারণে তাঁকে থামানো হয়েছিল। আইন‑শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি তেমনটাই বোঝায়। হয়তো তিরস্কার বা জরিমানা করে তাঁকে ছেড়েও দেওয়া হয়েছিল। এসব ক্ষেত্রে যেমনটা হয় আর কি?

মোটরসাইকেলটির সেই চালক হয়তো এরপর ভাবছিলেন অনেক কিছু। পুলিশ বা আর্মির হাত থেকে ছাড়া পেয়ে স্বস্তির সাথে সাথে কিছু অনুশোচনাও হচ্ছিল। তবে সেই ক্ষতকে আরও দগদগে করে দিতে যে ‘নতুন পুলিশ’রা একটু দূরেই বুম‑ক্যামেরা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তা হয়তো ততটা খেয়াল করেননি। আর এই সুযোগেই এগিয়ে এল। এল কেবলই ভিউ, ইমপ্রেশনের ইঁদুরদৌড়ে শামিল হওয়া কতিপয় সাংবাদিকেরা। এসেই তাঁরা শুরু করে দিলেন সাধারণের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ইজ্জত লুণ্ঠন!

ওপরের এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেই মেলে। হয়তো আগের, হয়তো এখনকার। কিন্তু এমন ঘটনা যে হরহামেশাই ঘটছে, তা নিশ্চিত। এই বিষয়গুলো ইদানীং বেশ বেড়েছে। আগেও যে ছিল না, তা নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এর হার বেড়েছে খুব বেশি। দেখা যাচ্ছে, আইন‑শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোথাও চেকপোস্ট বসালেই সেখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হিসেবে হাজির হয়ে যাচ্ছে ক্যামেরা‑বুম। এরপর চেকপোস্টে কেউ আইনভঙ্গের কারণে তিরস্কারের বা জরিমানার শিকার হলেই, তাদের দিকে ছুটে যাচ্ছে ক্যামেরা‑বুম, সাথে ওইসব সাংবাদিকেরা। তাঁরা আবার আরেক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। এভাবেই চলছে মিডিয়া ট্রায়াল! সেক্ষেত্রে কে দোষী, কে নির্দোষ, সেসব বিচারের সময় এই সাংবাদিকদের নেই। এমনকি তাদেরও যে মানবাধিকার আছে, সেসব বোঝারও সময় নেই। ফুটেজ আর সট পেলেই হলো!

এমনকি এসব কেউ দিতে না চাইলে আবার চলে জোরাজুরি। জবরদস্তিও হয়। ওইসব সাংবাদিক এমনভাবে চেকপোস্টে আটকে যাওয়া মানুষগুলোর ‘অনুভূতি’ ও ফুটেজ দাবি করেন, মনে হয় সাংবাদিক মানেই অন্যের অনিচ্ছাতেও এসব করা ‘অধিকার’!

এ দেশের সংবাদমাধ্যমগুলো দীর্ঘদিন ধরেই সাংবাদিকতার এমন ধরনের অপব্যবহার করে আসছে। ‘কমনসেন্স’বিহীন এমন কর্মকাণ্ড দিনশেষে পুরো সাংবাদিকতা বিষয়টিকেই সাধারণের কাছে কাঠগড়ায় তুলছে। সাংবাদিকতার সঠিক চর্চা এসব নয়। তবুও এসব চলছে দেদারসে। কারণ ভিউ লাগবে, লাইক‑কমেন্ট লাগবে, লাগবে ভাইরাল হওয়া। আর এসবের জন্য প্রয়োজন একটি বুম, একটি ক্যামেরা বা মোবাইল, এবং একটি নিরেট মাথা!

এমন ঘটনা জেনেবুঝেই ঘটানো হয়। রিপোর্টার বা মোজো জার্নালিস্টরা তো আর নিজের খুশি মতো চলেন না। নিউজ ম্যানেজাররা সেসব পরিকল্পনায় সম্মতিও দেন। ওপরের যে ধরনের ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে অনেক নামী‑দামী বা সুপরিচিত মিডিয়া হাউজের বুমও দেখা যায়। জেনেবুঝেই এসব করা হয় সস্তা উপায়ে লাইক‑ভিউ কামানোর জন্য। মিডিয়া হাউজগুলোর বড় কর্তারা এসবে সায়ও দেন। কারণ ভালো কাজ করে কিছু অর্জন করতে মাথা খাটাতে হয়। আর সস্তায় এসকল রাস্তায় ওটি প্রয়োজন হয় না।

একেবারে নৈতিকভাবে সৎ থেকে সাংবাদিকতার চর্চা করা সংবাদমাধ্যমের সংখ্যা আমাদের বাংলাদেশে হাতেগোণা। আঙুল গুণে যে কয়টা পাওয়া যায়, সেগুলোও আতশকাঁচের নিচে ভালোভাবে নিয়ে পরীক্ষা করল বিচ্যুতি চোখে পড়ে। ফলে এই দেশটার সংবাদমাধ্যম একটু বেশিই ত্রুটিপূর্ণ হয়ে পড়েছে অনেকদিন ধরেই। সাংবাদিকতার মূল বিষয়টাই এখন গৌণ হয়ে পড়েছে। দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা বা অন্যান্য অসঙ্গতি তুলে ধরার সাহস ও ইচ্ছার অভাবহেতু চলে আসছে ‘কিছু’ করে টিকে থাকার চিন্তা। আর এভাবেই উদ্ভব হচ্ছে লাইক‑শেয়ারের অসুস্থ প্রতিযোগিতার।

সেই প্রতিযোগিতা এমনই যে, পারলে এসব তথাকথিত সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকেরা মানুষের বেডরুমে ঢুকে যান। সাধারণের গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়টি এক্ষেত্রে কচুপাতায় থাকা জলের মতো বিষয়, যেকোনো সময় যাতে বিচ্যুতি ঘটে। আর তাই বুম আর ক্যামেরা থাকলেই সবাই বনে যায় সাংবাদিক!

ঠিক যেমনটা সম্প্রতি চট্টগ্রামে হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, সেখানে একটি গেস্ট হাউসে সাংবাদিক পরিচয়ে ক্যামেরা নিয়ে তল্লাশি চালানোর ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। গত শনিবার দুপুরে হান্নান রহিম তালুকদার নামের একটি ফেসবুক আইডিতে এটি আপলোড হয়। ১৫ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের এই ভিডিও আপলোডের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেটি ছড়িয়ে পড়ে। গেস্ট হাউসে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে কক্ষে কক্ষে অতিথিদের নাম-পরিচয়, জিজ্ঞাসাবাদ করা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

ভিডিওতে দেখা যায়, সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে নগরের বহদ্দারহাটে একটি গেস্ট হাউসে তল্লাশি চালানো হয়। একপর্যায়ে ক্যামেরা নিয়ে বিভিন্ন কক্ষে গিয়ে সেখানে থাকা অতিথিদের বের করে আনা হয়। তাঁদের কাছে পরিচয় জানতে চাওয়া হয়। কেন, কার সঙ্গে এসেছেন–এসব প্রশ্নও করা হয়। এমনকি স্বামী‑স্ত্রী পরিচয় দিলে তারা আসলেই স্বামী‑স্ত্রী কিনা সেই সংক্রান্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং প্রমাণ চাওয়া হয়।

সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেওয়া হান্নান রহিম তালুকদারের দাবি, তিনি দৈনিক চট্টগ্রাম সংবাদের সম্পাদক ও সিএসটিভি২৪‑এর চেয়ারম্যান। ফেসবুকের দেওয়া বিভিন্ন ছবি-ব্যানারে নিজেকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য বলে দাবি করেছেন তিনি। নিজের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা জাহিরের চেষ্টাও করেছেন।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রেসক্লাবের সদস্য নন হান্নান রহিম তালুকদার। চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নও জানিয়েছে, এই নামের ওই ব্যক্তি চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য নন। হান্নান রহিম তালুকদার অবশ্য দাবি করেছেন যে, এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিন প্রতিবেদন করেছেন তিনি। আর এলাকাবাসী নাকি মানববন্ধনও করবে ওই গেস্ট হাউসের বিরুদ্ধে।

অর্থাৎ, বোঝাই যাচ্ছে যে, ওখানে সবই ধান্ধার কারবার। এ ধরনের অভিযান চালাতে পারেন না কোনো সাংবাদিকই। এটি বেআইনি কাজ। কিন্তু কথা হলো, এমনটা করার উৎসাহ ও সাহস হান্নান রহিম তালুকদার পেলেন কোথায়?

পেয়েছেন আসলে মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলোর কাছ থেকেই। তারাই দেখিয়েছে যে, সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহার করে রাস্তাঘাটেই মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা যায়, বেআইনি কাজ করা যায়। মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়টিকে উপেক্ষা করা যায় অবলীলায়। এমনকি লাইক‑ভিউয়ের জন্য সাধারণকে জোরও করা যায়। এভাবেই এ দেশের মূল থেকে শুরু করে সকল ধারার সাংবাদিকতাতেই ছড়িয়েছে পচন!

হ্যাঁ, এক্ষেত্রে আইন‑শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও দায় আছে। তাদের কোনো কোনো সদস্যও নিশ্চয়ই চান নিজেদের কাজের ‘এমনতর’ প্রচার। নিজেদের কাজের ব্যাপক প্রচার, প্রসার চাইতে গিয়েই এসব আস্কারা পায়। নইলে আর সাংবাদিকেরা খবর পায় কীভাবে? এবং আইন‑শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও সাংবাদিকদের যার যার ‘দেখনদারি’র উদগ্র উদ্দেশ্য পূরণ করতে সাধারণের চরিত্রে কালিমা লেপন করা হয়। সমস্যা আর কী! আমজনতার তো জন্মই হয়েছে তার মাথায় কেউ কাঁঠাল ভাঙবে বলে।

তাই এ সমস্যার সমাধান আসলে কারও একার কম্ম নয়। পুরো ব্যবস্থাটি যতক্ষণ পর্যন্ত জনতামুখী না হচ্ছে, ততক্ষণ এসব থেকে মুক্তি নেই। এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের বা সাংবাদিকতার দায় সবচেয়ে বেশি। কারণ সাধারণ মানুষের জন্য, এই দেশটার জন্যই যে সাংবাদিকতা করার কথা ছিল তাদের। সেই তারাই যদি নির্লজ্জ, নিরেটের মতো আচরণ করেন, তাহলে আর মানুষ যাবে কই? এভাবে যদি চলতেই থাকে, তাহলে হয়তো একদিন সাধারণ মানুষ ‘সাংবাদিক’ শব্দটিই ভুলে যাবেন। ‘সাম্বাদিক’ বা ‘সঙবাদিক’ বা ‘সাংঘাতিক’ই তখন হবে সংবাদকর্মীদের একমাত্র পরিচয়! রঙ মেখে সত্যি সত্যিই সঙ সেজে রাস্তায় ঘোরাটা তখন পোষাবে তো?

Discover more at Max-Zero

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
Copyright © 2024 Manabatar Kontho
Theme Customized By BreakingNews

Powered by Max-Zero