মোঃ জাহিদ হাসান।
মানুষের জীবনে সুখ, আনন্দ, রোমাঞ্চের আকাঙ্ক্ষা থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু কখনো কখনো এই আকাঙ্ক্ষা পূরণের অপরিকল্পিত পথে পা বাড়িয়ে আমরা ঢুকে পড়ি অন্ধকারের ভয়াবহ জগতে। আর মাদক সেই অন্ধকারের আরেক নাম।
মাদকের ভয়াবহতা শুধু ব্যক্তির জীবনেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি ছড়িয়ে পড়ে পরিবার, সমাজ, এমনকি রাষ্ট্রের ক্ষতি করে। মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা হয়ে ওঠে অসামাজিক, অকর্মক্ষম, এবং অনেক সময় অপরাধী হয়ে ওঠে। পারিবারিক অশান্তি, সহিংসতা, আর্থিক বিপর্যয় এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি – মাদকের কুপ্রভাব ব্যাপক ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।
বাংলাদেশ সরকার মাদকের জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে, মাদক নির্মূল করার জন্য যেখানে বিভিন্ন রকম প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। সেখানে অর্থের বিনিময়ে মাদকের সহায়তা করার অভিযোগ উঠেছে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থানার এক এস আই এর বিরুদ্ধে।
বেশ কিছুদিন যাবত সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকের এক আইডি থেকে, মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থানা এলাকার মাদক সেবনের ভিডিও ভাইরাল হলে নড়ে-চড়ে বসে লৌহজং প্রশাসন। লৌহজং থানা কর্মকর্তা (ওসি) নির্দেশে বিভিন্ন জায়গায় ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করলেও ভাইরাল হওয়া সংশ্লিষ্ট কাউকে আটক করতে পারছে না বলে জানাচ্ছে পুলিশ। কারণ হিসেবে দেখাচ্ছে তাদের কাছে কোন আলামত পাওয়া যায়নি।
কিন্তু তথ্য বলছে অন্য কথা। লৌহজং, কলমা ইউনিয়ন ৮ নং ওয়ার্ডের বিদেশি মদের বোতলের ভিডিও ভাইরাল হওয়া ভিডিও তদন্তে গিয়ে, অনৈতিকভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠছে লৌহজং থানার এস আই জয়নালের বিরুদ্ধে। ঘটনার পরিদর্শনে গিয়ে অভিযুক্ত পরিবারের কাছে এক লক্ষ টাকা দাবি করে। উপায়ান্ত না পেয়ে অভিযুক্তের পরিবার দরকষাকষির মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকায় বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য রফা করে। মদের ভিডিও ভাইরাল হওয়া ব্যক্তি রাজুর মামা ইউনিয়ন পরিষদের ভিতর লেনদেন সম্পন্ন করেছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
পুলিশের এমন কর্মকাণ্ডে এলাকাবাসী হতবাক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন। মাদকে যেখানে যুব সমাজ ধ্বংসের মুখে, সেখানে রক্ষক যদি ভক্ষক হয়ে যায় তাহলে আমাদের নিরাপত্তা বলতে কিছুই থাকছে না। ৫ ই আগস্ট মত পরিবর্তনের পরে পুলিশের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে আমরা আশাহত।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের হুইস্কির বোতল সাজিয়ে রানা প্যাকেজিং ও হিসাব-নিকাশ করছে। ভিডিওটি প্রকাশের পর অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—দেশে যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাদকের বিরুদ্ধে যৌথভাবে অভিযান চালাচ্ছে, তখন কীভাবে একজন যুবকের কাছে এত বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ এল?
ভিডিওটি ঘিরে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এবং প্রশাসনের সঠিক তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।অনেকে আরো অভিযোগ করেন, মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীদের ধরতে ব্যর্থ হচ্ছে পুলিশ, বরং কোথাও কোথাও তাদের মধ্যে এক ধরনের সখ্যতা গড়ে উঠেছে বলেও সন্দেহ করছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে কলমা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফারুক হাওলাদার জানান, ভিডিওতে দেখা ছেলেটি তার ছেলে রানা। তিনি দাবি করেন, ঘটনাটি তার এক আত্মীয়ের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে ঘটেছে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, “১০ তারিখ বৃহস্পতিবার আমার আত্মীয়ের গায়ে হলুদ ছিল। ঢাকা থেকে আসা কিছু অতিথি নীল পানি (মদ) খেতে চেয়েছিল, এজন্য বোতলগুলো আনা হয়েছিল। আমার ছেলে এতে জড়িত না।
তখন প্রতিবেদক প্রশ্ন ছিলো গায়ে হলুদের মতো একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে ৩০ থেকে ৩৫টি বিদেশি ব্র্যান্ডের মদের বোতল কিভাবে সংগ্রহ করা সম্ভব হলো? তার কাছে সেলিম মোড়ল যাঁর বাড়িতে অনুষ্ঠানটি হয়েছিল, তার সঙ্গে যোগাযোগ কারার মুঠোফোন নাম্বার চাওয়া হলে তিনি বলেন তার ফোন চুরি হয়েছে এবং সেলিমের মড়লের নম্বর তার কাছে নেই।
এ বিষয়ে লৌহজং থানার এসআই জয়নাল আবেদীন বলেন, “আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করেছি। সেলিম মোড়লের বাড়িতে চারটি টিনের ঘর রয়েছে। সবগুলো ঘরে তল্লাশি চালানো হলেও কোনো মদের বোতল পাওয়া যায়নি। বাড়িতে তেমন লোকজনও ছিল না। তবে বিষয়টি নিয়ে আমাদের নজর রয়েছে। অর্থ আদায়ের ব্যাপারে তাকে প্রশ্ন করা হলে, বিষয়টি অস্বীকার করে এড়িয়ে যায়।
এদিকে লৌহজং থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হারুন অর রশিদ বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওটি দেখার পরপরই পুলিশ পাঠিয়ে তল্লাশি চালানো হয়েছে। ওখানে আমরা কোন মাদকদ্রব্য বোতল পাইনি।
Discover more at Max-Zero
Powered by Max-Zero
Leave a Reply