রাসেল রানা, বাঙলা কলেজ প্রতিনিধি
রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী একটি কলেজ সরকারি বাঙলা কলেজ। কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর ৬২ বছর পেরোলেও কয়েকটি বিভাগে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। এমনকি দুটি বিভাগে কোনো শিক্ষকই নেই।
বিশেষ করে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের মার্কেটিং এবং ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে কোনো শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। অথচ এই দুই বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হাজারের উপরে। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক ছাড়াই অন্য বিভাগের শিক্ষকের তদারকিতে চলছে এ দুই বিভাগ। প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক না থাকায় নিয়মিত ক্লাস, পরীক্ষা ও ল্যাব কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এসব বিভাগে শিক্ষক না থাকলেও প্রতি শিক্ষাবর্ষে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি চলছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
কলেজ সূত্রে আরও জানা গেছে, শুধু ফিন্যান্স ও মার্কেটিং নয়—দর্শন, ভূগোল, আইসিটি ও মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। যেখানে প্রতিটি বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০০-৫০০ জন। শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠদান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, ফলে শিক্ষার মান ক্রমেই নিম্নমুখী হচ্ছে। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে গ্রুপ স্টাডি বা কোচিংয়ের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এতে শুধু শিক্ষার গুণগত মানই ব্যাহত হচ্ছে না, বরং শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপও বাড়ছে।
ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী নওশিন শারমিলি বলেন, “কিছুদিন আগে পর্যন্ত আমাদের নিজস্ব কোনো বিভাগ ছিল না। আমাদের বিভাগের প্রধান মাহবুব স্যার ছিলেন একমাত্র শিক্ষক। উনার পদত্যাগের পর থেকে আর কোনো শিক্ষক নেই। আমাদের প্রতিটি ক্লাস অ্যাকাউন্টিং বিভাগের শিক্ষকরা নেন। ফলে তারা আমাদের ক্লাসের ওপর তেমন গুরুত্ব দেন না। পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাবে অনেক সময় রুটিনে ক্লাস থাকলেও ক্লাস নেওয়া হয় না। ফলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। ফিন্যান্স বিভাগের প্রত্যেক শিক্ষার্থী বাইরে কোচিং বা প্রাইভেট পড়ে। কারণ আমাদের অধিকাংশ বিষয় দক্ষ শিক্ষক ছাড়া বোঝা সম্ভব না।”
ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী তামান্না তাসনিম বলেন, “আমাদের বিভাগ গুরুতর শিক্ষক সংকটের মুখোমুখি। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় ক্লাস ও গবেষণা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। নির্ধারিত কোর্সসমূহ সময়মতো সম্পন্ন করা যাচ্ছে না, যা আমাদের একাডেমিক অগ্রগতিকে পিছিয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে বিশেষায়িত বিষয়গুলোর জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় আমরা মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। অনেক ক্ষেত্রে একজন শিক্ষককে একাধিক কোর্স পরিচালনা করতে হচ্ছে, যা তাদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে এবং শিক্ষার মান কমিয়ে দিচ্ছে। আমরা অতি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান দেখতে চাই।”
শিক্ষক সংকট নিয়ে হিসাববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী বলেন, “এটা দীর্ঘদিনের সমস্যা। আমরা অনেকবার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চেষ্টা করেছি, কিন্তু কোনো পদ সৃষ্টি হয়নি। বর্তমানে হিসাববিজ্ঞানের শিক্ষক দ্বারা ফিন্যান্স ও ব্যাংকিংয়ের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। আমরা যদিও ক্লাস নিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু আমরা তো ফিন্যান্সের শিক্ষক নয়। এই বিভাগে অতি দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ প্রয়োজন। এভাবে অন্য বিভাগের শিক্ষক দিয়ে একটি বিভাগ চালানো খুবই কষ্টকর। শিক্ষকদের দ্বিগুণ চাপ নিতে হচ্ছে, এতে উভয় বিভাগের শিক্ষার্থীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রশাসনকে অবগত করলেও তারা এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।”
মার্কেটিং বিভাগে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষার মান উন্নয়ন সংক্রান্ত দাবি নিয়ে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি সচিবালয়ে যান শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধি দলটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে একটি স্মারকলিপি জমা দেয়। তবে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার এক মাসের বেশি সময় পার হলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সরকারি বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ কামরুল হাসান বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ সম্পর্কে অবগত এবং ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছি। নতুন শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। শিগগিরই এই সমস্যা সমাধান হবে বলে আশা করছি। শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের অনুরোধ, তারা যেন ধৈর্য ধরেন। আমরা এই সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
সর্বোপরি এসব বিভাগের শিক্ষার্থীরা কলেজ প্রশাসন ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছেন, তারা যেন শিক্ষক সংকট নিয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেন।
Discover more at Max-Zero
Powered by Max-Zero
Leave a Reply