রান্নাঘরের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পেঁয়াজের দাম এবার শতক ছাড়িয়ে গেল। স্থানীয় জাতের পেঁয়াজের সরবরাহ কম এবং প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আমদানি কমে যাওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। শুধু পেঁয়াজ নয়, অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও আকাশছোঁয়া।
কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকার উপরে। ব্রয়লার মুরগির ডিমের দাম ডজনপ্রতি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। সাম্প্রতিক বৃষ্টির কারণে কিছু সবজির দামও বেড়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৪ বছর ধরে দেশে মুদ্রাস্ফীতি ৯ শতাংশের উপরে রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধিই এর মূল কারণ। বিশেষ করে খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি সাধারণ মানুষের ঘাড়ে চেপে বসেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, মে মাসে সার্বিক মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৯.৮৯ শতাংশ, যার মধ্যে খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি ছিল ১০.৭৬ শতাংশ।
রাজধানীর শেওড়াপাড়া, তালতলা, কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, দুই সপ্তাহ আগের তুলনায় স্থানীয় জাতের পেঁয়াজের দাম অনেক বেশি।
খুচরা বিক্রেতারা জানান, এ বছর পেঁয়াজের মৌসুম শুরুতেই দাম ছিল চড়া। ফেব্রুয়ারিতে নতুন পেঁয়াজ উঠলেও দাম ছিল ৮০-১০০ টাকা। মার্চ মাসে তা বেড়ে ১২০ টাকা হয়। এপ্রিলে দাম কিছুটা কমলেও, আবারও তা ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।
ঈদুল আযহার সময় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৮০-৯০ টাকা দরে। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। অর্থাৎ, মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ২০ টাকা। ব্যবসায়ীরা জানান, গত তিন দিনে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে আরও ১০ টাকা।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি চার-পাঁচ মাস বন্ধ থাকায় ভোক্তাদের দেশীয় পেঁয়াজের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। সম্প্রতি প্রতিবেশী দেশটি পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিলেও ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় আমদানিকারকরা নিরুৎসাহিত।
তারা আরও জানান, ভারতে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম এখন দেশীয় জাতের চেয়েও বেশি।
ঢাকার শ্যামবাজারের এক পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, বর্তমানে ভারত থেকে খুবই কম পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, মৌসুমে স্থানীয় জাতের পেঁয়াজের দাম সাধারণত ৪০ টাকার নিচে থাকে। কিন্তু এ বছর শুরু থেকেই দাম অস্বাভাবিকভাবে বেশি।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) জানিয়েছে, এপ্রিল মাসে পেঁয়াজের মৌসুম থাকা সত্ত্বেও দাম ছিল ৪৫-৬০ টাকা।
বাজার পরিস্থিতিতে হতাশা প্রকাশ করে বেসরকারি চাকরিজীবী সাজিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আগে ৪০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনতাম। এখন দ্বিগুণেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে আমরা অসহায়।’
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশে বছরে প্রায় ৩০ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। এর এক-তৃতীয়াংশ আমদানি করা হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ৩৫ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। যা আগের বছরের তুলনায় সামান্য কম।
এই হিসেব অনুযায়ী, দেশে চাহিদার চেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হচ্ছে। তাই বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি থাকার কথা নয়।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটলে পণ্যের দাম বাড়তে পারে। কিন্তু মূল সমস্যা হলো মুদ্রাস্ফীতি। কারণ, আয়ের তুলনায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হুমকির মুখে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরিস্থিতি মোকাবেলায় কর্তৃপক্ষের উচিত মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং জনগণের আয় বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দেওয়া।’
Leave a Reply