নিজস্ব প্রতিবেদক:
কেএনএস সন্ত্রাসীদের ধরতে খুব শিগগিরই বান্দরবানে আরও একটি বিশেষ সাঁড়াশি অভিযান শুরু করা হবে বলে শুক্রবার (৫ এপ্রিল) সকালে জানিয়েছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। এরপর আজ শনিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে বান্দরবানে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে সভা করবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানা কামাল। ধারণা করা হচ্ছে, এই সভা থেকে অভিযানের বিষয়ে নতুন ঘোষণা আসতে পারে।
এদিকে বান্দরবান থেকে পাঠানো সংবাদে জানা গেছে, জেলা সদর এবং রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) টহল দিচ্ছে। এলাকাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও স্পর্শকাতর পয়েন্টে রাখা হয়েছে নিরাপত্তাবাহিনী ও বিজিবিকে। স্থানীয় অভিজ্ঞ মহল ধারণা করছে, বড় ধরনের একটি সাঁড়াশি অভিযানের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে এসব নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এর আগে গত বছরে র্যাব পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাস ও মৌলবাদ বিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। ওই অভিযানে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র বিপুলসংখ্যক অনুসারী ও শীর্ষ নেতাকে আটকের পর বান্দরবানের দুর্গম এলাকায় কেএনএ’র সঙ্গে জঙ্গি সংগঠনগুলোর গড়ে ওঠা নেটওয়ার্ক অনেকটা ভেঙে যায়। স্থানীয়দের ধারণা, এবারের বিশেষ সাঁড়াশি অভিযান এ অঞ্চল থেকে সন্ত্রাসীদের নির্মূলে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে র্যাব।
এছাড়া বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রায়হান কাজেমী জানান, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) কর্তৃপক্ষের কাছে আরও ৪০০ পুলিশ সদস্য চাওয়া হয়েছে। শনিবার (৬ এপ্রিল) সকাল থেকে তারা ওই এলাকাগুলোয় বিদ্যমান পুলিশের সঙ্গে যুক্ত হবে।
এর আগে গত মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাত ও বুধবার (৩ এপ্রিল) দুপুরের মধ্যে ১৭ ঘণ্টায় বান্দরবানের তিন উপজেলায় তিন সরকারি ব্যাংকে ডাকাতি, ১৪টি অস্ত্র লুট, তল্লাশি চৌকিতে হামলা ও ব্যাংক ম্যানেজার অপহরণ করা হয়।
এই ঘটনার জেরে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান চলছে। অভিযানে অংশগ্রহণকারী নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি উপজেলার সম্ভাব্য স্থানে তল্লাশি চালাচ্ছেন।
অন্যদিকে পুনরায় সন্ত্রাসী হামলার ভয় ও আতঙ্কে থানচি উপজেলা সদরে বিভিন্ন এলাকার লোকজন নিরাপদ জায়গায় সরে যাচ্ছে। এলাকায় সেনাবাহিনী পুলিশ ও বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থাপনায় বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। এ দু’টি উপজেলায় নিরাপত্তা বাড়াতে জেলা শহর থেকে এপিবিএন ও র্যাব সদস্যদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে রুমা সোনালী ব্যাংকের লুট করা অস্ত্র উদ্ধারে ও সন্ত্রাসীদের ধরতে যৌথ বাহিনীর অভিযান এখনো শুরু হয়নি। তবে পুলিশ সেনাবাহিনী বিজিবি র্যাব আলাদা আলাদাভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে।
পুলিশ সুপার মো: সৈকত শাহীন ও র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিষয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণার পর খুব শিগগিরই কম্বিং অপারেশন শুরু হতে পারে।
জানা গেছে, প্রায় তিন বছর ধরে বান্দরবানে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফ নামের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী সক্রিয় আছে। সেখানকার বম, পাংখোয়া, লুসাই, খিয়াং, ম্রো ও খুমি—এসব জাতিগোষ্ঠীর মানুষ নিয়ে সংগঠনটি গঠিত হয়েছে। জাতিগোষ্ঠীগুলোর বেশির ভাগ খ্রিষ্টধর্মের অনুসারী।
প্রথম দিকে কেএনএফের বক্তব্য ছিল, তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান জাতিগোষ্ঠী চাকমা ও মারমাদের দ্বারা নিগৃহীত হচ্ছেন। এ দুই জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তারা অস্ত্র তুলে নিয়েছেন। আর কেএনএফকে যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন, নাথান বম, তিনি কিন্তু রুমারই ছেলে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন।
১৯৯৮ সালের পার্বত্য চুক্তির ফলে যেসব সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি হয়েছে, তার বেশির ভাগই রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িকেন্দ্রিক এবং সুবিধাভোগীদের বেশির ভাগ ছিল চাকমা, এরপর মারমা। এখানে যে বঞ্চনা বা বৈষম্য তৈরি হয়েছে, সে কারণে কুকি-চিনেরা অস্ত্র ধরেছে বলে তাদের ভাষ্য। তবে কেএনএফ ধীরে ধীরে তাদের চরিত্র বদলাতে থাকে এবং দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠে। দেখা গেল, অর্থের জন্য তারা ইসলামি তথাকথিত জঙ্গিগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে। সেই অর্থ দিয়ে হয়তো আরও বেশি অস্ত্র কিনেছে।
একই সঙ্গে সম্প্রতি এ অঞ্চল মাদকের বড় রুট হয়ে উঠেছে। মাদক ব্যবসাও মূলত অস্ত্র কেনার টাকা সংগ্রহের জন্য। সব মিলিয়ে এ অঞ্চল উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। এ অঞ্চলে শুধু বাংলাদেশের এসব এলাকা নয়, সেখানে আছে মিয়ানমারের চিন ও রাখাইন প্রদেশ এবং ভারতের মিজোরাম ও মণিপুর রাজ্য। এসব এলাকায় কুকি-চিনের বড় প্রভাব আছে।
চিন প্রদেশে বিদ্রোহী গোষ্ঠী ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স (সিডিএফ) লড়াই করছে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে। সেই গোষ্ঠীর বেশির ভাগ হচ্ছে কুকি-চিন। আবার মিজোরামেও এখান থেকে অনেক কুকি চলে গেছে। সেখানে এ নিয়ে নানা ধরনের অস্থিরতাও তৈরি হয়েছে।
Leave a Reply